চোখ চুলকানোর কারণ কি

চোখ চুলকানোর বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যা শারীরিক এবং পরিবেশগত উভয় দিক থেকেই সম্পর্কিত। চোখের চুলকানি সাধারনত কোনো অস্বস্তি বা অস্বাভাবিক অনুভূতির সৃষ্টি করে এবং এটি মানুষের দৈনন্দিন কার্যকলাপে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। চোখ চুলকানোর পেছনে কিছু সাধারণ কারণ রয়েছে, যেমন অ্যালার্জি, সংক্রমণ, শুষ্কতা, বা দীর্ঘসময় কম্পিউটার বা মোবাইল স্ক্রিনের সামনে থাকা। এসব কারণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।

প্রথমত, অ্যালার্জি হল চোখ চুলকানোর অন্যতম প্রধান কারণ। পরিবেশের নানা ধরনের অ্যালার্জেন যেমন ধুলাবালি, ফুলের পরাগ, পশুর লোম বা কেমিক্যাল, এসব কিছু চোখে প্রবেশ করলে অ্যালার্জি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। অ্যালার্জির ফলে চোখে চুলকানি, জ্বালা, লালচে ভাব এবং পানি পড়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। এ ধরনের অ্যালার্জির চিকিৎসা হিসেবে সাধারণত অ্যান্টিহিস্টামিন বা অ্যালার্জি প্রতিরোধক ওষুধ ব্যবহার করা হয়।

দ্বিতীয়ত, চোখের শুষ্কতা বা ড্রাই আই সিনড্রোমও চোখ চুলকানোর অন্যতম কারণ হতে পারে। এই অবস্থায় চোখের পৃষ্ঠে যথেষ্ট পরিমাণে অশ্রু উৎপন্ন হয় না, ফলে চোখ শুষ্ক হয়ে যায় এবং এতে চুলকানি, ঝাপসা দৃষ্টি, বা অস্বস্তি হতে পারে। ড্রাই আই সাধারণত কম্পিউটার বা মোবাইল স্ক্রিনের সামনে দীর্ঘসময় ধরে কাজ করার ফলে হতে পারে, যখন চোখের পাতা অনেক কম ঘোরানো হয় এবং অশ্রু জমাটবদ্ধ হয়।

তৃতীয়ত, চোখে কোনো সংক্রমণ হলে চুলকানি হতে পারে। চোখের সংক্রমণের মধ্যে কনজাংটিভাইটিস (pink eye) অন্যতম। এই রোগটি চোখে ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের ফলে ঘটে এবং চোখের লালচে হওয়া, চুলকানি, পানির মতো আঠালো ক্ষরণ হওয়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। কনজাংটিভাইটিসের জন্য চিকিৎসক থেকে উপযুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ ব্যবহার করতে হতে পারে।

চতুর্থত, চোখে কোনো ধরনের বিদেশী বস্তু বা ময়লা প্রবেশ করলে তাও চোখ চুলকানোর কারণ হতে পারে। চোখে ধুলাবালি বা কন্টাক্ট লেন্সের ময়লা প্রবেশ করলে চোখে অস্বস্তি, জ্বালা এবং চুলকানি হতে পারে। এই অবস্থায় চোখের পাতা বন্ধ করে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়া বা চোখ ধোয়া ভালো ফল দিতে পারে।

পঞ্চমত, শরীরের অভ্যন্তরীণ সমস্যা যেমন হরমোনাল পরিবর্তন বা কিছু রোগও চোখে চুলকানি সৃষ্টি করতে পারে। প্রেগনেন্সি, ঋতুস্রাব বা থাইরয়েড সমস্যা এই ধরনের হরমোনাল পরিবর্তনের উদাহরণ। এছাড়া, ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো দীর্ঘমেয়াদী রোগও চোখের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, যা চুলকানি বা অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি করে।

এছাড়া, চোখের চুলকানির পেছনে আরও কিছু ক্ষতিকারক অভ্যাস যেমন অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া বা চোখে অতিরিক্ত চাপ পড়াও দায়ী হতে পারে। তাই, চোখের চুলকানির কারণে যদি দীর্ঘস্থায়ী বা তীব্র হয়ে থাকে, তবে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চোখের চুলকানি যদি নিয়মিত হয়ে থাকে, তবে তা জীবনে বিশাল অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে এবং এটি কখনো কখনো গুরুতর কোনো শারীরিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। অতএব, এটি উপেক্ষা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।

হাঁসের ডিমের উপকারিতা

চোখ চুলকানির ঔষধ

চোখ চুলকানির চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে, যা মূলত চুলকানির কারণ এবং তীব্রতার ওপর নির্ভর করে। প্রথমত, যদি চোখ চুলকানির কারণ অ্যালার্জি হয়ে থাকে, তবে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ যেমন, লরাটাডিন, সিট্রিজিন বা ডিপেনহাইড্রামিন ব্যবহার করা হয়। এই ঔষধগুলি অ্যালার্জির লক্ষণ কমাতে সহায়তা করে এবং চোখের চুলকানি, সোরি ভাব বা পানির মতো ক্ষরণ কমিয়ে দেয়। এছাড়াও, অ্যালার্জির কারণে চোখে চুলকানি হলে অ্যালার্জি নিরোধক চোখের ড্রপও ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন ফ্লুরোবেন্ডাজোল বা অ্যালোফেনাক ড্রপ।

দ্বিতীয়ত, চোখের শুষ্কতা বা ড্রাই আই সিনড্রোমের কারণে চুলকানি হলে সেক্ষেত্রে চোখের আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে ভিজ্যুয়াল টিয়ার ড্রপ বা আর্টিফিশিয়াল টিয়ার ড্রপ ব্যবহৃত হয়। এই ড্রপগুলি চোখের শুষ্কতা দূর করতে সহায়তা করে এবং চুলকানির অনুভূতি কমাতে সাহায্য করে। যদি চোখে কোনো সংক্রমণ থাকে, যেমন কনজাংটিভাইটিস, তখন চিকিৎসক অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যান্টিভাইরাল চোখের ড্রপ prescrabe করেন, যেমন টোব্রামাইসিন বা সাইক্লোস্পোরিন ড্রপ।

তবে, কোনো ধরনের ঔষধ ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ভুল ঔষধ ব্যবহারে সমস্যাটি আরও বাড়তে পারে। চোখের চুলকানির চিকিৎসায় সাধারণত স্থানীয় চিকিৎসার পাশাপাশি জীবনযাত্রার পরিবর্তন যেমন পর্যাপ্ত পানি পান, পরিবেশের অ্যালার্জেন থেকে দূরে থাকা বা কম্পিউটার স্ক্রিনের সামনে বেশি সময় না কাটানো সহায়ক হতে পারে।

By SAGDOM

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *