ডেঙ্গু হলে করণীয়

ডেঙ্গু জ্বর হলে প্রথমেই যথাযথ বিশ্রাম নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রচুর তরল খাবার, যেমন ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের জুস ও খাবার স্যালাইন খান। জ্বর, শরীরের ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা ও চামড়ায় রাশ বা ফুসকুড়ি দেখা দিলে তা ডেঙ্গুর লক্ষণ হতে পারে। যদি জ্বরের সঙ্গে পেটের ব্যথা, বমি, বা অন্য কোনো গুরুতর উপসর্গ দেখা দেয়, তবে তৎক্ষণাত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ‘এ’ ক্যাটাগরির ডেঙ্গু রোগীরা বাড়িতে বিশ্রাম নিয়ে চিকিৎসা নিতে পারেন, তবে ‘বি’ বা ‘সি’ ক্যাটাগরির রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হতে পারে। বিশেষ করে যাদের পেটের ব্যথা, বমি, ডায়াবেটিস, কিডনি বা লিভারের সমস্যা রয়েছে, তাদের দ্রুত হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ডেঙ্গু জ্বরে প্যারাসিটামল ব্যবহার করা যেতে পারে, কিন্তু অ্যাসপিরিন বা অন্য কোনো ধরনের ওষুধ, যেমন আইবুপ্রোফেন বা ক্লোফেনাক, ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে কারণ এগুলি রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। প্লাটিলেট কাউন্ট কম হলে বা রক্তপাত হলে হাসপাতাল ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেওয়া আবশ্যক।

শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

শিশুদের ডেঙ্গু জ্বর একটি মারাত্মক মশাবাহিত রোগ, যা দ্রুত শনাক্ত করা এবং চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডেঙ্গু সাধারণত ৪-১০ দিন পর লক্ষণ প্রকাশ পায়, যার মধ্যে রয়েছে উচ্চ জ্বর, মাথাব্যথা, শরীরের ব্যথা, এবং ফুসকুড়ি। শিশুদের মধ্যে বিশেষত গুরুতর লক্ষণ যেমন অবিরাম বমি, পেটের তীব্র ব্যথা, মাড়ি থেকে রক্তপাত এবং তীব্র ক্লান্তি দেখা দিতে পারে, যা ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের ইঙ্গিত হতে পারে এবং তা চিকিৎসা না করলে জীবনঘাতী হতে পারে। শিশুর ডেঙ্গুর চিকিৎসা মূলত লক্ষণ নিরাময়ের উপর ভিত্তি করে, যেমন পর্যাপ্ত বিশ্রাম, প্রচুর তরল খাবার (ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন, ফলের রস, পানি) এবং প্যারাসিটামল ব্যবহার করে জ্বর কমানো। তবে, অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেন ব্যবহার করা যাবে না, কারণ তা রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়ে শিরায় তরল প্রতিস্থাপন এবং প্লাটিলেট মনিটরিং করা প্রয়োজন হতে পারে। শিশুদের ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী পদক্ষেপ যেমন DEET ধারণকারী পোকামাকড় প্রতিরোধক ব্যবহার, দীর্ঘহাতা কাপড় পরানো, এবং ঘরের আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা পানি পরিষ্কার রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

ডিম খাওয়ার উপকারিতা

ডেঙ্গু জ্বর হলে কি খেতে হবে

ডেঙ্গু জ্বর হলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী রাখতে এবং দ্রুত সুস্থ হতে হলে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে প্রোটিন, ভিটামিন বি১২, ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি, আয়রন, ভিটামিন ডি, জিংক এবং ফসফরাস সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত। ডিম, সামুদ্রিক মাছ, ব্রকলি, ফুলকপি, ক্যাপসিকাম, পালংশাক, বাদাম, বিট, মটরশুঁটি, কলা, তরমুজ, পেঁপে, লেবু, মাল্টা ইত্যাদি এসব খাদ্য উপাদান শরীরের শক্তি ও প্লাটিলেট তৈরি করতে সাহায্য করে। ফলিক অ্যাসিড ও ভিটামিন বি১২ বিশেষভাবে প্লাটিলেট সংখ্যা বাড়াতে সহায়ক, যা ডেঙ্গুতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ধরনের খাবার খেলে দ্রুত সুস্থতা আসবে এবং শরীরের ভেতরের প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে।

ডেঙ্গু হলে কি খাবার খাওয়া যাবে না

ডেঙ্গু হলে কিছু খাবার পরিহার করা উচিত, যেগুলি শরীরের পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। ফাস্ট ফুড, ভাজাপোড়া খাবার, কাঁচা সবজি বা কাঁচা খাবার (যেমন সালাদ) এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এগুলি হজমে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং শরীরে অতিরিক্ত চাপ ফেলতে পারে। এছাড়া, অতিরিক্ত শক্ত খাবার খাওয়া উচিত নয়, কারণ এটি পেটের অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে। ডেঙ্গু জ্বরে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি থাকতে পারে, তাই কড়া দুধ–চা, কফি, এবং এনার্জি ড্রিঙ্ক পরিহার করা উচিত, কারণ এসব খাবার শুধু হজমে অসুবিধা তৈরি করে না, বরং শরীরের দ্রুত আরোগ্য লাভের পথেও বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

ডেঙ্গু হলে কি শরীর চুলকায়

ডেঙ্গু জ্বরে অনেক সময় শরীরে চুলকানি হতে পারে, যা সাধারণত দুই থেকে তিন দিন স্থায়ী হয়। এই সময় রোগীর শরীরে চুলকানি বাড়তে পারে এবং হৃৎস্পন্দন কমে যেতে পারে। ডেঙ্গু আক্রান্তদের চামড়ায় ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে, যার ফলে চামড়ার উপরের স্তর উঠে যেতে পারে। এই পর্যায়ে, শরীরে তরল অতিরিক্ত পরিমাণে জমা হতে পারে, যা তরল ওভারলোডের কারণ হতে পারে। যদি এই অবস্থায় তরল মস্তিষ্কে প্রভাবিত করে, তবে রোগীর চেতনা হ্রাস পেতে পারে। এটি একটি সতর্ক সংকেত হতে পারে এবং দ্রুত চিকিৎসা সহায়তার প্রয়োজন।

ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে

ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের তিন থেকে পনেরো দিনের মধ্যে দেখা দেয়। প্রথমে উপসর্গ হিসেবে জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, পেশিতে ও গাঁটে ব্যথা, এবং গাত্রচর্মে ফুসকুড়ি দেখা যায়। সাধারণত ডেঙ্গু জ্বর দুই থেকে সাত দিনের মধ্যে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠে, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি দীর্ঘ সময় ধরে থাকতে পারে। বিশেষত যদি ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বর বা ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের মতো গুরুতর অবস্থায় পরিণত হয়, তখন চিকিৎসা সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে।

By SAGDOM

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *