নবজাতকের জন্ডিস হলে মায়ের করনীয়

নবজাতকের জন্ডিস একটি সাধারণ সমস্যা, যা জন্মের পর দুই সপ্তাহের মধ্যে দেখা দেয় এবং এটি সাধারণত কোনো বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি করে না। নবজাতকের দেহে বিলিরুবিন (bilirubin) নামক উপাদানের জমে যাওয়ার কারণে ত্বকে হলদে রঙ দেখা দেয়, যা ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস হিসেবে পরিচিত। এই ধরনের জন্ডিস সাধারণত কোনো চিকিৎসা ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে সেরে যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে এর মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।

নবজাতর কারণ কের জন্ডিসেও লক্ষণ

জন্ডিসের মূল কারণ হল নবজাতকের দেহে বিলিরুবিনের আধিক্য। যেহেতু জন্মের পর নবজাতকের লিভার পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকরী হতে সময় নেয়, তাই এই বিলিরুবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। সাধারণত ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস কম মাত্রায় দেখা দেয় এবং এটি জন্মের কয়েক দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়। তবে কিছু নবজাতক যেমন কম ওজনের বাচ্চা, যাদের মায়ের ডায়াবেটিস আছে, যাদের দুধের পরিমাণ কম অথবা যারা কম পায়খানা করছে, তাদের জন্ডিস গুরুতর হতে পারে।

এছাড়া, যদি জন্ডিস জন্মের প্রথম ২৪ ঘণ্টায় দেখা দেয়, তাহলে তা গুরুতর হতে পারে এবং দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া উচিত। জন্ডিসের লক্ষণ সাধারণত মুখ, বুক, পেট, ঊরু এবং হাত-পায়ের ত্বকে হলুদ বর্ণ ধারণ করে। হাত-পায়ের তালু হলুদ হয়ে গেলে বুঝতে হবে জন্ডিস মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছেছে।

মায়ের করণীয়:

যদি নবজাতকের ত্বকে জন্ডিস দেখা দেয়, তবে প্রথমেই শিশুর পেডিয়াট্রিশিয়ান বা নবজাতক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। বিশেষত জন্মের প্রথম ২৪ ঘণ্টায় যদি জন্ডিস দেখা দেয়, তবে তা মারাত্মক সমস্যা হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, যদি জন্ডিস হাত বা পায়ের তালু পর্যন্ত পৌঁছায়, বা কোনো পরীক্ষায় জন্ডিসের মাত্রা বেশি পাওয়া যায়, তবে শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হতে পারে।

এছাড়া, মায়ের রক্তের গ্রুপও জন্ডিসের মাত্রা নির্ধারণে ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে যদি মায়ের রক্তের গ্রুপ ‘ও’ অথবা আরএইচ নেগেটিভ হয়, তবে নবজাতকের জন্ডিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে এবং তা গুরুতর হয়ে উঠতে পারে।

হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিৎসা:

নবজাতকের জন্ডিস যদি হাত ও পায়ের তালু পর্যন্ত পৌঁছায়, প্রথম ২৪ ঘণ্টায় জন্ডিস দেখা দেয়, অথবা পরীক্ষায় বেশি মাত্রায় জন্ডিস পাওয়া যায়, তাহলে নবজাতককে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু করতে হয়। চিকিৎসায় সাধারণত দুটি পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়:

১. ফটোথেরাপি: যদি জন্ডিসের মাত্রা একটু বাড়ে, তাহলে ফটোথেরাপি (নবজাতকের শরীরে বিশেষ আলোর প্রয়োগ) দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। এই পদ্ধতিতে বিলিরুবিনের পরিমাণ কমানো যায়।

২. এক্সচেঞ্জ ট্রান্সফিউশন: যদি জন্ডিস খুব গুরুতর হয় এবং অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি কাজ না করে, তখন রক্ত পরিবর্তন করা হতে পারে। এই পদ্ধতিতে নবজাতকের দেহে নতুন রক্ত দেয়া হয়, যাতে বিলিরুবিনের মাত্রা কমে যায়।

এটা মনে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে, রোদে রেখে জন্ডিসের চিকিৎসা করা কোনোভাবেই নিরাপদ নয়। রোদে থাকার কারণে নবজাতকের শরীরে ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার, অতিরিক্ত গরম হওয়া, ত্বকের ক্ষতি হওয়ার মতো ঝুঁকি সৃষ্টি হতে পারে। তাই কখনোই প্রাকৃতিক রোদে রেখে জন্ডিসের চিকিৎসা করবেন না।

কিডনি রোগের লক্ষণ

উপসংহার:

নবজাতকের জন্ডিস সাধারণত কোনো বড় সমস্যা নয় এবং এটি অনেক ক্ষেত্রেই নিজেরাই সেরে যায়। তবে, কিছু ক্ষেত্রে যখন জন্ডিসের মাত্রা বাড়ে, তখন চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। মা-বাবাকে সতর্ক থাকতে হবে এবং প্রথম লক্ষণ দেখা দিলেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। প্রথম ২৪ ঘণ্টায় বা গুরুতর জন্ডিস হলে দ্রুত চিকিৎসা প্রাপ্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

By SAGDOM

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *