কোমরের ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এর যন্ত্রণা অনেক বেশি কষ্টদায়ক হতে পারে। ব্যথার কারণে অনেকেরই দৈনন্দিন কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়, যেমন বসা, উঠা বা চলাফেরা করা। কোমরের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে আমরা অনেক সময় পেইনকিলার ব্যবহার করি, তবে এটি দীর্ঘস্থায়ী সমাধান নয়। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ ব্যবহার করতে হবে, এবং এর পাশাপাশি কিছু ঘরোয়া উপায়ও রয়েছে যা কোমরের ব্যথা কমাতে সহায়তা করতে পারে।
কোমরের ব্যথা কমানোর জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো- প্রথমত, এক জায়গায় বেশিক্ষণ বসে না থাকা এবং মাঝে মধ্যে শরীরচর্চা করা। দ্বিতীয়ত, কোমরের জন্য উপযুক্ত বিছানায় ঘুমানো, যেমন নরম ম্যাট্রেস বা ফোমের বিছানা এড়িয়ে চলা। তৃতীয়ত, গরম সেঁক দেওয়া, বিশেষ করে ব্যথার স্থানগুলোর ওপর। এছাড়া আদা, হলুদ, মেথি বীজ এবং লেবুর শরবতও কোমরের ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে। ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন দুধ, ঘি, চিজ, ফল, শাকসবজি এবং বাদাম খাওয়ারও বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।
কোমরের ব্যথার কিছু সাধারণ কারণের মধ্যে রয়েছে লাম্বার স্পনডোলাইসিস, এলআইডি, লো বেক পেন, মাংসপেশির সমস্যা, অতিরিক্ত ওজন, একটানা হাঁটা বা দাঁড়িয়ে থাকা, ভারী কিছু বহন করা ইত্যাদি। এই সকল কারণে কোমরের ব্যথা সৃষ্টি হতে পারে, এবং সঠিক চিকিৎসা ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন এ থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করতে পারে।
কোমরের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
কোমরের বা পিঠের ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যায়, তবে জীবনযাত্রায় ব্যাপক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে যারা দীর্ঘসময় বসে কাজ করেন বা ভারী কিছু তোলেন, তাদের মধ্যে এই ব্যথার প্রকোপ বেশি। পেইনকিলার ব্যবহার করা এক সময় স্বস্তি দিতে পারে, তবে এটি কেবল সাময়িক উপশম, এবং বারবার পেইনকিলার খাওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করা সবচেয়ে ভাল।
কোমরের ব্যথা কমানোর জন্য বেশ কিছু সহজ ঘরোয়া উপায় রয়েছে। যেমন, নারকেল তেলের সঙ্গে কর্পুর মিশিয়ে গরম করে সেটি কোমরে মলতে পারেন, যা ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে। এছাড়া নীলগিরি তেলও একে অপরের ব্যথার স্থানে মালিশ করলে স্বস্তি পাওয়া যায়। দিনে দু’বার গরম সেঁক দেওয়ার মাধ্যমে কোমরের ব্যথা কমানো যায়। সরিষার তেলের মধ্যে রসুন কুচি মিশিয়ে গরম করে শরীরে মাখলে ব্যথা দ্রুত কমে যায়। গরম দুধে হলুদ মিশিয়ে পান করাও খুবই উপকারী, কারণ হলুদে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। আদার চায়ের মাধ্যমে কোমরের ব্যথা কমানো যায়, এবং পান পাতায় ঘি লাগিয়ে গরম সেঁক দেওয়ারও বিশেষ উপকারিতা রয়েছে। এই ঘরোয়া উপায়গুলো অনুসরণ করলে কোমরের ব্যথা কিছুটা কমতে পারে, তবে বারবার ব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
কোমরের ব্যথা কমানোর ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট
ক্যালসিয়াম একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ উপাদান যা আমাদের শরীরের হাড়, দাঁত, স্নায়ু, মাংসপেশি এবং হৃদস্পন্দনের স্বাভাবিক কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয়। এর অভাবে হাড় ক্ষয় বা অস্টিওপোরোসিসের মতো সমস্যা হতে পারে, যা সাধারণত প্রবীণ বয়সে দেখা যায়। ক্যালসিয়াম সঠিক পরিমাণে না পাওয়ার কারণে তরুণদেরও বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তবে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া একমাত্র সমাধান নয়; শরীরের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণের জন্য প্রাকৃতিক খাবার গ্রহণ করাও সম্ভব।
ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত, কারণ অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ কিডনির পাথর হতে পারে এবং কিছু নির্দিষ্ট শারীরিক অবস্থায় এটি ক্ষতিকরও হতে পারে। দৈনন্দিন খাবারের মধ্যে ক্যালসিয়াম রয়েছে, যেমন দুধ, পনির, দই, বাদাম, সয়াবিন, সামুদ্রিক মাছ, শাকসবজি এবং ফল। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য প্রতিদিন ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম এবং ৬০০ ইউনিট ভিটামিন ডি প্রয়োজন। এছাড়া, ক্যালসিয়াম শোষণ বাড়াতে ভিটামিন ডি, সি, এবং আয়রন যুক্ত খাবার খাওয়া দরকার।
যদি কোনো কারণে খাবারের মাধ্যমে ক্যালসিয়াম পর্যাপ্তভাবে না পাওয়া যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট সেবন করা যেতে পারে, তবে এই ট্যাবলেটের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন গ্যাস্ট্রিক বা কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে, তাই এর মাত্রা এবং ব্যবহারের সময় সঠিকভাবে নির্ধারণ করা উচিত। ক্যালসিয়াম সঠিকভাবে শোষণ হতে ভিটামিন ডি প্রয়োজন, যা সূর্যের আলো থেকে পাওয়া যায়। সুতরাং, বয়স বাড়ার আগে থেকেই ক্যালসিয়ামের সঠিক গ্রহণ ও খাদ্যাভ্যাসের দিকে নজর রাখা উচিত, যাতে ভবিষ্যতে হাড় সংক্রান্ত সমস্যা এড়ানো যায়।